রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্ক : ম্যাচ শুরুর আগেই জানা ছিল জিতলেই হবে ইতিহাস, মিলবে প্রথমবারের মতো ভারতকে তাদেরই মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে হারানোর গৌরব। কাজটা সহজ ছিল না একদমই। মাঠে প্রতিপক্ষ ১১ খেলোয়াড়, সঙ্গে গ্যালারিতে উপস্থিত প্রায় হাজার চল্লিশেক দর্শক। তার ওপর সাম্প্রতিক সময়ের অস্থির অবস্থাও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে।
এত সবকিছু পাশ কাটিয়েই সিরিজটি খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। যার শেষ ম্যাচে সমীকরণ দাঁড়ায় জিততে পারলেই হবে ইতিহাস। তরুণ নাইম শেখের সাহসী ব্যাটিংয়ে সে পথে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিণতি হয়েছে প্রতিবারের মতোই, তীরে এসে তরী ডোবানো।
ভারতের করা ১৭৪ রানের বিপরীতে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ১৪৪ রানে। দ্বিপক চাহার ও শিভাম দুবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৩০ রানের সহজ জয়েই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে ভারত। ধরে রেখেছে ঘরের মাঠে চার বছর ধরে তিন ম্যাচের সিরিজে না হারার রেকর্ড।
অথচ নাইম শেখ ও মোহাম্মদ মিঠুনের তৃতীয় উইকেট জুটিতে দারুণ এক জয়ের পথেই এগুচ্ছিলো বাংলাদেশ দল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই দুই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান লিটন দাস ও সৌম্য সরকার ফিরে গেলে দলের হাল ধরেন তরুণ নাইম ও সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া মিঠুন।
দুজন মিলে মাত্র ৬১ বলে যোগ করেন ৭৮ রান। যেখানে মূলত সঙ্গ দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন মিঠুন। কিন্তু ১৩তম ওভারের শেষ বলে ২৯ বলে ২৭ রান করে মিঠুন আউট হওয়ার পরই বদলে যায় সব সমীকরণ। আউটের মিছিলে যোগ দেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ ধ্রুবরা। যার ফলে শেষপর্যন্ত মেলে ৩০ রানের পরাজয়।
এর আগে অঘোষিত এই ফাইনালে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অধিনায়কের মুখে হাসি ফুটিয়ে শুরুতেই ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ানকে চেপে ধরেন টাইগার বোলাররা। প্রথম ওভারে ভারত তুলতে পারে মাত্র ৩ রান।
দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে সেই চাপটা আরও বাড়িয়ে তুলেন শফিউল ইসলাম। প্রথম টি-টোয়েন্টির মতোই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রোহিত শর্মাকে পরাস্ত করেন ডানহাতি এই পেসার। তার ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিটি রোহিতের ব্যাটে লেগে উপড়ে যায় লেগ স্ট্যাম্প। ফলে ৬ বলে মাত্র ২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন ভারতীয় অধিনায়ক।
দ্বিতীয় উইকেটে সেই ধাক্কা কিছুটা সামলে ওঠেছিলেন ধাওয়ান আর লোকেশ রাহুল। তাদের ৩২ রানের জুটিটিও ভাঙেন শফিউল। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে তাকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ হন ধাওয়ান। ১৬ বলে ৪ বাউন্ডারিতে করেন ১৯ রান।
ওই ওভারেই আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন শফিউল। স্কয়ারে সহজ এক ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন শূন্য রানে থাকা আয়ার, কিন্তু আমিনুল ইসলাম বিপ্লব হাতে নিয়েও সেই ক্যাচটি ধরে রাখতে পারেননি।
এই আয়ারকে নিয়েই তৃতীয় উইকেটে বড় জুটি গড়ে তুলেন রাহুল। ৩৩ বলেই তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। ৪০ বলে তাদের ৫৯ রানের জুটিটি চোখ রাঙাচ্ছিল।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে আবারও বল হাতে নেন আল আমিন। ওই ওভারের প্রথম বলেই মিডঅফে তুলে মারতে গিয়ে লিটন দাসের ক্যাচ হন রাহুল। ৩৫ বলে ৭ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৫২ রান।
তবে জীবন পাওয়া আয়ার এরপরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিটা তুলে নেন ২৭ বলেই। এর মধ্যে ১৫তম ওভারে আফিফ হোসেনকে প্রথম তিন বলে হাঁকান টানা তিন ছক্কা।
আয়ার-রিশাভ পান্তের জুটি থেকে ৪ ওভারেই আসে ৪৫ রান। তবে এই জুটিতে পান্তের অবদান বলতে গেলে ছিলই না। টুকটুক করে এগিয়ে যাওয়া ভারতের উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ১৭তম ওভারে এসে বোল্ড হন সৌম্য সরকারের স্লোয়ারে। ৯ বলে করেন মাত্র ৬ রান।
ওই ওভারেই ভয়ংকর আয়ারকেও সাজঘরের পথ দেখান সৌম্য। ৩৩ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায় ৬২ রান করে লং অফে লিটন দাসের ক্যাচ হন আয়ার। তবে ততক্ষণে বড় সংগ্রহের ভিত গড়া হয়ে গেছে ভারতের।
১৯তম ওভারে দারুণ বোলিং করেন আল আমিন। দেন মাত্র ৬ রান। ওভারের চতুর্থ বলে তো নিজের দ্বিতীয় উইকেটটাও পেতে পারতেন, মিডউইকেটে শুভাম দুবের সহজ ক্যাচ যদি ড্রপ না হতো। এবারও ক্যাচ ফেলে দেন সেই বিপ্লব।
দুবে অবশ্য জীবন পেয়েও তেমন কিছু করতে পারেননি। ৮ বলে অপরাজিত থাকেন ৯ রানে। সঙ্গী মনিশ পাণ্ডে শেষের কাজটা করে দিয়েছেন। ১৩ বলে তিনি নটআউট থাকেন ২২ রানে।
বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন ‘পার্টটাইমার’ সৌম্য সরকার। ৪ ওভারে ২৯ রান খরচায় তিনি নেন ২ উইকেট। ২টি উইকেট শিকার শফিউলেরও।